এবিএনএ: ভারতীয় ঋণের অর্থছাড়ের প্রবাহ কম উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গেছেন। সেখানে নানাবিধ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। আশা করি এই সফরের মাধ্যমে তাদের ঋণের অর্থের প্রবাহ বাড়বে। আমাদের প্রকল্পগুলোর আরও দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। তিনি বলেন, এসব ঋণ অনেকটা আমলা নির্ভর। তাদের দেশের সচিবালয় বলে আমরা তাদের সহযোগিতা করি না, আমাদের দেশের সচিবালয়ের কর্তারা বলেন তারা আমাদের সহযোগিতা করে না। আশা করি শিগগির এই জটিলতা কাটবে।
লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) কর্মসূচির অধীনে ভারত এখন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। এখন পর্যন্ত নমনীয় লাইন অব ক্রেডিট ঋণচুক্তি সই হয়েছে তিনটি। এলওসির অধীনে মোট প্রতিশ্রুত অর্থের পরিমাণ ৭ দশমিক ৩৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত মোট অর্থছাড় হয়েছে ১২২ দশমিক ২ কোটি ডলার। ভারতীয় এই ঋণে মূলত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো খাত বিশেষত- রেল যোগাযোগ, সড়ক পরিবহন, নৌ পরিবহন, স্থানীয় সরকার, বিদ্যুৎ, আইসিটি, টেলিযোগাযোগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন, অর্থনৈতিক অঞ্চল খাতে উন্নয়ন করা হয়েছে। কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান।
এলওসি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমার যা অভিজ্ঞতা এসব আমলানির্ভর। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক অতটা আমলানির্ভর নয়। আমাদের সচিবালয় বা দিল্লির সচিবালয়ে যারা থাকেন তাদের ভারতের প্রধানমন্ত্রীতো বলবেনই, আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলবেন। স্বাভাবিকভাবে এগুলোর গতি কমে যায় বলে আমার ধারণা। তবে প্রধানমন্ত্রীর সফরে এসবের গতি পাবে। উভয় দেশকে স্বীকার করেই পার হতে হবে। এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সফরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। আশা করি এটার একটা গতি বা মাত্রা পাবে। এটার (ঋণের অর্থছাড়ের) গতি বাড়ানো দরকার, আমরাও তা স্বীকার করি।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ঋণপ্রাপ্তির প্রসঙ্গে এম এ মান্নান বলেন, আমরা আইএমএফ থেকে অবশ্যই ঋণ পাবো। এটা গ্যারান্টি। আইএমএফ আমাদেরই অংশ। এর আগেও আমরা আইএমএফ থেকে ঋণ পেয়েছি। এটা একটা রুটিন ওয়ার্ক। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি বড়, আমাদের ক্ষুধা আছে। তাই আমরা আগের তুলনায় বেশি ঋণ চেয়েছি। আমরা অবশ্যই ঋণ পাবো।ঋণের শর্ত প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কিছু শর্ত তো থাকে। বন্ধুর কাছেও তো টাকা ধার নিলে বলে কবে টাকা ফেরত দিবি। আইএমএফ আসবে, আমাদের সঙ্গে কথা বলবে বন্ধুর মতো। কিন্তু মহাজনের মতো নয়।
আইএমইফের ঋণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আইএমইফের কিছু দায়দায়িত্ব আছে। তা হলো কোনো রাষ্ট্র যদি সাময়িক অসুবিধায় পড়ে তবে ঋণ অথবা অনুদান দিয়ে থাকে। নানাভাবে সহায়তায় এগিয়ে আসে। তাছাড়া কোনো রাষ্ট্র যদি ভয়ংকর খাদে পড়ে যায় তবে তাকে তুলে আনার জন্য ব্যবস্থা নেবে আইএমইফ, এটা হলো বেইল আউট। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য কিছু পণ্ডিত আমাদের ঋণ নেওয়াকে বেইল আউট বলছেন। আমি তাদের বলছি বেইল আউটের সঠিক মানে আগে জানুন। আমরা খাদের মধ্যে পড়ি না। খাদের কিনারে যাওয়ার আগেই সরকার প্রধানের সঠিক নেতৃত্বে আমরা নিরাপদে আছি। সাইফুর রহমানের সময় ঋণ নিয়েছি, কিবরিয়া সাহেবের সময়ও আইএমএফ থেকে ঋণ নিয়েছি। তখন কিন্তু এসব নিয়ে কথা হয়নি, তাহলে এখন কেন হচ্ছে? এই সংস্থায় যারা কাজ করেন তারা আমাদেরও কর্মী।
তিনি বলেন, আইএমএফে আমাদেরও চাঁদা দিতে হয়। আমরা আনুপাতিক হারে চাঁদা দেই। ধনী দেশগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী দেয়, আমরাও চাঁদা দেই। আইএমএফের কর্মীরা আমাদেরও কর্মী। তারা আমেরিকা বা জাপানের কর্মী নয়। আইএমএফের কর্মীরা আসবে, আমাদের সঙ্গে বসবে। আমার জানা মতে তারা এখনো শর্ত দেয়নি। তেলের দাম না স্যান্ডউইচের দাম বাড়াতে হবে এই বিষয়ে আইএমএফ কিছুই বলেনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমদের অর্থনীতির খাদে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। এসময় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কিনারেই দাঁড়িয়ে গেছে। পেছেনে ফেরা শুরু হয়নি। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে পারলে আশা করি অক্টোবরে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা আছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমরা প্রকল্প অনুমোদন করে দিয়ে থাকি। এটা দেখভাল করেন প্রকল্প পরিচালক। একজন ঠিকাদার প্রকল্পে ১০ ইটের পরিবর্তেন ৮টি দিয়ে দিলে আমাদের ধরতে কষ্ট হয়। আমরা স্বীকার করছি অনেক কিছু এখনো বাস্তবায়ন করতে পারি না। এখনও প্রকল্প পরিচালকেরা প্রকল্প এলাকায় থাকেন না, এখনো একজন একাধিক প্রকল্পের পরিচালক। তবে এটা ঠিক যে পরিমাণে প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করছি তা ঐতিহাসিক। নিকটবর্তী সময়ে এত বেশি প্রকল্প কখনও নেওয়া হয়নি।
অক্টোবরে দেশ ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করে মন্ত্রী বলেন, আমরা শ্রমজীবী অর্থনীতিতে বসবাস করি। আমরা দিন আনি দিন খাই। আমরা এই দেশে কাজ করে বিদেশে পাঠাই, আবার একইভাবে বিদেশে কাজ করে এই দেশে পাঠাই। এই সার্কেলে আমাদের অর্থনীতি বসবাস করে। কাজের পরিধি আরও বাড়ছে। স্মরণকালে সব থেকে বেশি খাদ্য রিজার্ভ আছে, ২০ লাখ মেট্রিক টন। আমরা আশা করছি আমন ধান ঘরে চলে আসবে। আপনারা দেখেছেন চালের বাজার কমছে। আমরা আইএমএফ ঋণটা পেয়ে যাবো। এই সব বিবেচনায় মনে করি আমরা ঘুরে দাঁড়াবো। তাই যাই করি না কেন, আমাদের আগে দরকার সামাজিক স্থিতিশীলতা। সামাজিক বিশৃঙ্খলা দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, ডলারের দাম ১০০ টাকা পর্যন্ত হলে আমি খুশি হবো। এর বেশি হলে কষ্টদায়ক হবে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি অক্টোবর মাসে কমে আসতে পারে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বাড়তে পারে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিজেএফবি সভাপতি হামিদ-উজ-জামান। সংঘঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাইদ শাহীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিজেএফবি সহসভাপতি মাসুম বিল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মফিজুল সাদিক, অর্থ সম্পাদক সাইদ রিপন, প্রচার সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক এম আর মাসফি, নির্বাহী সদস্য তানজিলা নিঝুম প্রমুখ।